Sunday 19 August 2012

সিঁড়ি


গুনে গুনে ২০টা ধাপ ভাঙলে তবে ছাদ। চারপাশের ইঁটের জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট একটা দোতলার ছাদসে ছাদের কোনো বাহার নেই, কাপড় শোকানোর জন্য ছাড়া বড় একটা কেউ সেখানে যায়ও না। যান শুধু কাবেরী। ঠিক ছাদে নয়, ছাদের কোনায় যে একটা ঠাকুরঘরটা - সেইখানে

ঠাকুরঘরের ভেতরেও বিশেষ কিছু নেই – খালি একটা মাঝারি আয়তনের সিংহাসন আর তার ওপর শালগ্রামশিলা, মা কালীর ফটো, গণেশের মূর্তি, শিবলিঙ্গ। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে যেটা সবচেয়ে বেশী চোখে পড়ে সেটা হল উত্তরের দেওয়ালে পাশাপাশি তিনটে ক্যালেনডার। একটায় সারদা মা, একটায় রাধা-কৃষ্ণ, আর একটা মা তারার ছবি। নীচের তারিখগুলোর বিশেষ কদর নেই অবশ্যতারিখ আর ক্ষণের শুভাশুভের হিসেব রাখতে পাঁজি তো রয়েছেই। ক্যালেন্ডারগুলোর আসল ব্যবহার হল নিয়ম করে ছবির মা তারার পায়ে আর সারদা মায়ের কপালে লাল চন্দনের ফোঁটা দেওয়া। রাধা-কৃষ্ণর জন্য যদিও শ্বেতচন্দনের ব্যবস্থা। এই নিয়মের অন্যথা হয়নি গত ৭ বছরে। আজও হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তবে বাধ সাধছে ওই ২০ ধাপ সিঁড়ি। ঠিক আজ নয়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাধ সাধছে।

প্রথম কয়েক ধাপে কিন্তু এখনো বিশেষ কষ্ট হয় না।

রেলিঙে ভর দিয়ে তরতর করে ৫টা ধাপ উঠে পড়লেন কাবেরীদেবী। একটু দম নিলেন।

সিঁড়ির মাঝামাঝি থেকে এক পাশ ধরে চটি সাজানো – কোনোটা ঘরের, কোনোটা বাইরের। নজর পড়তেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। বড্ড, বড্ড বিরক্ত লাগে ওনার এটা দেখলেইকতদিন বলেছেন, একটা জুতোর র‍্যাক কিনলেই চুকে যায়। বুবাই নির্ঘাত একদিন পা জড়িয়ে পড়ে অনর্থ ঘটাবে।

বুবাই - মানে সবেধননীলমণি নাতি। যার চিন্তা করতে করতে আজকাল মন্ত্রের খেই হারিয়ে ফেলেন কাবেরী – সেই বুবাই।

আজ ফিরুক ছেলে, ঘ্যান ঘ্যান করে করে ব্যাতিব্যস্ত করে তুলবেন, যতক্ষণ না রাজি হয়। সে ফিরতে যত রাতই হোক। মনে মনে রাত ৯টার ঘরে একটা ঢ্যাঁড়া দিলেন কাবেরী।

ছেলে বউ নাতি নিয়ে কাবেরীর ছোট্ট সংসার। ছোট বলে কিন্তু ঝক্কি কম না। যাবতীয় দায় দায়িত্ব বউমার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, তবু তার সংসার থেকে ছুটি পাওয়া হয়নি এখনো। নাতির পেট কামড়ালে দেশোয়ালি টোটকা দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোয় ছেলের শ্বশুরবাড়ির জন্য শাড়ি পছন্দ করা অবধি, সবটাতেই এখনো তার নজরের প্রয়োজন পড়ে। অনেকদিন থেকেই ভাবছেন, এবার ছুটি নেবেন। সত্যিই তো, আর কতদিনই বা টানবেন? আজ ৪০ বছর হতে চলল, এই জোয়াল কাঁধে নিয়েছেন, এবার তো...

ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল, পুজোর আর মাত্র এক মাস বাকি, কিন্তু শাড়ি এখনো কেনা হয়নি। উফ্‌ফ্‌, সব কী এখনো ওনাকেই মাথায় রাখতে হবে? সিঁড়ির মত বিরক্তিও আজ ধাপে ধাপে উঠছে।

রাত ৯টার ঘরে আর একটা ঢ্যাঁড়া পড়ল।

লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে পরের ধাপটা উঠলেন কাবেরী। আর অমনি মাথায় কি একটা ঠেকলো।

ন্যাতা! সিঁড়ির এপার-ওপার টানা দেওয়া কাপড় শুকোনোর দড়ি, তার ঠিক মাঝখানটায় ঝুলছে একটা নোংরা ন্যাতা। কোনো মানে হয়? এই চান করে বেরোলেন, পুজো দেবেন। ছিঃ! আর সহ্য করা যাচ্ছে না!

“বউমাআআআআ”!!

বউমার সাড়া তিনি আশা করেননি এই সময়। তার তো রোজ রাত জেগে খুটখাট ল্যাপটপে কাজ, আর রোজ দেরী করে ওঠা। এখনো তার ঘুমের সময়।

ডাকে যদি সাড়া নাও দেয়, অন্তত ঘুমটা ত নষ্ট হবে একটু। বুড়ো মানুষটাকে ভোগানোর এইটুকু শাস্তি অন্তত হোক!

“বউমাআআআআ”! গলাটা একটু চড়িয়ে চেঁচালেন কাবেরী।

সাড়া নেই। না থাক। তিনি নিশ্চিত ঘুম এবার ঠিকই ভেঙেছে। বিরক্তির পারদ একটু নামিয়ে পরের সিড়ির ধাপে মন দিলেন কাবেরী। ঠাকুরঘরে গঙ্গাজল তো আছেই, শুদ্ধি করে নেওয়া যাবেখন।

২০ ধাপ সিড়ি – ১০টা এমুখো, ১০টা ওমুখো। মাঝখানে একটা ছোট্ট ল্যান্ডিং। ছেলে একটা টুল রেখে দিয়েছে ওখানে। কাবেরী ওইখানে বসে একটু জিরিয়ে নেবেন।

কিন্তু তার আগে আরও ৪টে ধাপ।

অনেকদিন ধরেই ছেলে বলে আসছে - ঠাকুরকে একতলায় নামিয়ে আনলেই হয়, রোজ রোজ এইভাবে সিড়ি ভাঙার তো কোনো প্রয়োজন নেই! ও কি বুঝবে? আজকালকার মেয়ে – তাদের হাতে সংসার ছাড়া যায়। কিন্তু পুজো, ছোঁওয়াছুঁই? ও কি ওদের বোঝানো যায় নাকি? বেশী বলতে গেলেও আবার কথা শোনাবে – কোনটা কুসংস্কার, কোনটা পাগলামি – আরও কত কি!

তার চেয়ে ভাই ন্যাতার ওপর দিয়েই যাক!

নিজের মনে বিড়বিড় করছিলেন কাবেরী। কখন যে টুলটায় পৌঁছে গেছেন, খেয়াল করেননি। ডান হাঁটুটা শক্ত করে চেপে ধরে আস্তে আস্তে বসলেন, কপালের ঘাম মুছলেন আঁচলে।

পুজো আসতে চলল। মা-কে সোনার হার দেবেন বলে মানত করা আছে। কি করে দেবেন কে জানে? এই হাঁটুর ব্যথায় বেরোনই দায়। সেই শেষ কবে দক্ষিণেশ্বর গেছিলেন, উনি বেঁচে ছিলেন তখনও। সেবারই মানত করেছিলান, বউমার ছেলে হলে সোনার হার দেবেন। সেই শীতেই বুবাই হল, আর তার পর পরেই উনি চলে গেলেন। তারপর থেকেই বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পুজোয় একবার মাকে দেখার ইচ্ছে আছে। তারপর তিনি নিশ্চিন্তে মরবেন।

দেখি। এটাও তো সেই ছেলেকে বলতে হবে।

আর কতো কীই বা উনি বলবেন ছেলেকে? আজকাল ওনার বক্‌বক্‌ শুনতে শুনতে ছেলেও বিরক্ত হয়ে গেছে। উনি যাই বলেন, চুপচাপ শুনে কেমন নির্লিপ্ত মুখে “আচ্ছা” বলে চলে যায়।

“তখন কিছু বলছিলে, মা?” বউমার গলা পেয়ে চিন্তায় ছেদ পড়ল কাবেরীর।

“না বউমা, এই কটা বাজে জিজ্ঞেস করছিলাম।”

“সাড়ে দশটা। তোমার পুজো হয়ে গেছে?”

“হ্যাঁ, এই তো, আর একটু বাকি” বলে মনে মনে জিভ কেটে উঠে পড়লেন কাবেরী। সত্যিই আজ দেরী হয়ে গেছে। এখনও ১০টা ধাপ বাকি যে!

উঠেই বসে পড়লেন। বুকটা ধড়ফড় করছে একটু। আজকাল মাঝেমাঝেই শ্বাসকষ্ট হয়।

আঁচলটা দিয়ে একটু হাওয়া খেলেন খানিক্ষণ। দরদর করে ঘাম আসছে। তবে এটা নতুন কিছু না। একটু চোখ বুজে বসে থাকলেই কমে যাবে।

বসে থাকতে থাকতেই গাছগুলোর কথা মনে পড়ল। ঠাকুরঘরের দরজার কাছে কয়েকটা টব বসিয়েছেন কাবেরী – তুলসি, বেলফুল, গাঁদা। কালই খেয়াল হল বেলগাছটার পাতাগুলো মরে যাচ্ছে – সার দিতে হত।

“ওই যাঃ! খুরপিটা আনা হল না তো!” মাটিটা একটু খুঁচিয়ে আলগা করে দেওয়ার দরকার ছিল।

“আর ক’টা জিনিস মাথায় রাখব? মা, মা গো!”

উঠে দু’ধাপ পেরোলেন কাবেরী। আরো ৮ ধাপ বাকি।

ভেজানো ছাদের দরজার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে শেষ ধাপটায়। সেদিকে তাকিয়ে কাবেরীর আপশোশ আর বেড়ে গেল। সকাল-টা মেঘলা দেখে ডালবাটাটা রান্নাঘরেই রেখে এলেন। এরম রোদ জানলে বড়ি শুকোতে দিয়ে দিতেন। বউমা বড্ড আরাম করে খায়।

ওকে বলি ডালবাটাটা দিয়ে যেতে?

“বউমাআআআআ”!

আগের দু বারের মতই সাড়া নেই।

যাক গে। কাল দেওয়া যাবেখ’ন।

হয়ে এসেছে। আর একটু উঠলেই শেষ। একটা লম্বা দম নিলেন কাবেরী।

আজ খুব ঘাম হচ্ছে।

********************************

“স্যার, বুড়িটা তো বক্‌বক্‌ করেই দিন কাবার করে দিল। লোক পাঠাই?”

“অত তাড়া কিসের হে চিত্রগুপ্ত? এ তো যে-সে জিনিস না, হল স্বর্গের সিঁড়ি - ভাঙতে সময় লাগে। তুমি বরং লাঞ্চটা সেরেই এসো।” বলে যমরাজ চোখ বুজলেন।

Saturday 30 June 2012

ছেলেটা


রোজকার মত বাইরে মোরগ ডাকছে, মোড়ের মাথার মসজিদটায় আজান দিচ্ছে। রোজকার মত ঠিক সেই সময়ে সুমনের ঘুমটা ভেঙে গেল।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ার অভ্যেস। ঘড়ির কাঁটা যেই ৬টার ঘর ছুঁই ছুঁই, সুমন অমনি তড়াক করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। তারপর ৭টার মধ্যে প্রাত্যহিক যোগ ব্যায়াম সেরে চান করে একদম ফিটফাট। তাতে আর কিছু না হক, অফিস যাওয়ার আগে অনেকটা সময় ওর হাতে এসে যায়।

আজ কিন্ত ঘুম ভেঙে হাত-পা কেমন আড়ষ্ট লাগল সুমনের। বিছানা ছেড়ে ওঠা দূর-অস্ত, পাশ ফিরতেও কেমন জানি ইচ্ছে করছে না। সারা শরীরে, মনে এক অদ্ভুত অবসাদ, এক সীমাহীন আলস্য। খানিক্ষন ফুল স্পীডে চলা সীলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সুমনের চোখটা আবার বুজে এল।

ক’টা বাজে এখন? ওঠবার সময় হয়েছে নিশ্চই! নাকি বেশী সকালে ঘুম ভেঙে গেল? পায়ের দিকের দেওয়ালে একটা বড় ঘড়ি আছে। অনেক কষ্টে একটা চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাল সুমন। ধুলোমাখা সবজে রঙের দেওয়ালটা কির’ম জানি বেশী ময়লা লাগছে।

ধুৎ! কোথায়  গেল ঘড়িটা?

খানিক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সুমন বুঝল কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।

ঘড়িটা তো নেই!!! ডাইনের দেওয়াল, বাঁয়ের দেওয়াল – কোত্থাও নেই!

গেল কোথায়? উলটো দিকে মাথা করে শুয়েছে, না কী?

নাঃ! আর তাকিয়েও থাকা যাচ্ছে না। চোখদুটো আপনিই আবার বুজে আসল সুমনের।

---------------------------------

খালি বালতিতে কলের জল পড়ার আওয়াজ সুমনের ভারি অপছন্দ। আর ঠিক সেই আওয়াজেই দ্বিতীয়বার ঘুম ভাঙল আজ।

তার মানে পূর্নিমা চান করতে গেছে।

পূর্নিমা, মানে সুমনের স্ত্রী।

কিন্তু তার তো অনেক বেলায় চান করার অভ্যেশ! কতক্ষন ঘুমচ্ছে সুমন? স্বভাবমত পায়ের দিকের ঘড়ীটার দিকে আরেকবার তাকাল সুমন, আর তাকিয়েই মনে পড়ল “ওঃ! ওটা তো নেই!”

এবার উঠতেই হছে। এক ঝটকায় উঠে পড়ার চেষ্টা করল সুমন।

হল না। একটুও নড়তে পারল না।

“হল কি? পঙ্গু হয়ে গেলাম নাকি?”

“পূর্নিমাআআআআআআআ” – ডাক দিল সুমন। বা বলা ভাল ডাক দেওয়ার চেষ্টা করল। কারন আওয়াজ একটুও বেরল না। কিন্তু ওর তো ঠোঁট নড়ছে, জিভ নড়ছে, এমনকি কথা বলার চেষ্টা করলে কন্ঠনালীতে সেটা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।

কিন্তু আওয়াজ? আওয়াজের কি হল?

“পূর্নিমাআআআআআআআ” – সেই একই ফল। কোন আওয়াজ নেই।

এবার একটু ভয় করছে সুমনের। ও কি বোবা হয়ে গেছে? কালা হয়ে গেছে? কি হয়েছে ওর?

আর ও এখন আছেই বা কোথায়?

--------------------------------------

বাথরুমে জলের আওয়াজ থেমেছে। পূর্নিমা আর ৫ মিনিটে বেরোবে। তারপর নিশ্চই ওর অবস্থা দেখে ডাক্তার ডাকবে। নিজেকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করল সুমন।

আর ভাবতে লাগলো। কাল রাতে ও কোথায় শুয়েছে? অন্যদিনের মত কালকেও তো ডিনারের পর একটু হাঁটতে বেরিয়েছিল পূর্নিমাকে নিয়ে। তারপর? রাস্তায় পূর্নিমার স্কুলের কোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেছিল। তারপর যা হয়! খানিকক্ষণ পার্কের বেঞ্চিতে বসে ওদের ছোটবেলার স্মৃতিরোমন্থন, ফুটপাথে দাঁড়িয়ে এক সাথে চা খাওয়া, বন্ধুটার আই-ফোনে ফটো তোলা-টোলা – এইসব হল। তারপর?

নিশ্চই বাড়ি ফিরেছিলাম! আর কোথায়ই বা যাবে সুমন? কিন্তু আর কিছুই মনে পড়ছে না।

রাত থেকেই শরীর খারাপ হয়নি তো? হয়ত তাই-ই কিছু মনে নেই।

পূর্নিমা এখনো বেরচ্ছে না কেন?

“পূর্নি......” নাঃ। লাভ নেই।

গলা শুকিয়ে আসছে সুমনের। এত গরম লাগছে কেন? পাখাটা তো ঠিকই ঘুরছে, তবু যেন হাওয়া গায়ে না লেগে পিছলে যাচ্ছে।

চোখ বুজে নিজের শরীরটাকে নতুন করে অনুভব করার চেষ্টা করল সুমন। হৃদপিন্ডের ধুকপুক ঠিক চলছে তো? হ্যাঁ, চলছে। নিশ্বাসের উত্তাপ পড়ছে ওপরের ঠোঁটে। তাহলে? বাকি শরীরটা কেন ওর মনের বশে নেই? সর্বশক্তি দিয়ে আরেকবার ঘাড় ঘোরানোর চেষ্টা করল সে।

হচ্ছে না।

নিজেকে বড়ো অসহায় লাগছে সুমনের। ও বেঁচে আছে তো? এটা কি বিছানা, না কি এক অদৃশ্য কফিন যার মধ্যে ওকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে?

-------------------------------------------

“শুনছো? গ্যাস ফুরিয়েছে। ইন্‌ডেনে খবর দিতে হবে” – এতক্ষণে পূর্নিমার গলা শোনা গেল। কখন জানি বাথরুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছে।

একবার আমার দিকে খেয়াল করেও দেখল না? অদ্ভুত মেয়ে বটে।

রান্নাঘরে ঘটাং ঘটাং শব্দ। খালি সিলিন্ডার বদলানো হচ্ছে। এই একটা কাজ পূর্নিমা কখন নিজে করেনি, সুমনকে দিয়ে করিয়ে এসেছে। আজ নিজে করছে কেন?পূর্নিমার এঘরে আসা অবধি কিছু করার নেই। মনে মনে সময় গুনতে লাগল সুমন। এক মিনিট, দু মিনিট, তিন...

সিলিন্ডার বদলানো হয়ে গেছে নিশ্চই। গরম তেলে ফোড়ন পড়ার ছ্যাক্‌ ছ্যাক্‌ শোনা জাচ্ছে।

“উফ্‌ফ্‌! ছাড়ো। কি শুরু করেছ বল তো কাল রাত থেকে?” পূর্নিমা??!! এ কার সাথে কথা বলছে?

“এই শয়তান ছেলে! ছাড়ো, রান্না করতে দাও” পূর্নিমার গলায় মিথ্যে রাগ মেশানো আদরের সুর।

সুমন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। পূর্নিমা!

“এবার ম’লে সুতো হব, তাঁতির বাড়ি জন্ম লব...” এটা তো ছেলের গলা। সেই ছেলেটা – সেই কালকের ছেলেটা। কি জানি নাম?

হাসির আওয়াজ। সাথে আরো অনেক কিছুর, যা সুমন শুনেও শুনতে চায় না।

কি করেছে ওরা? ওকে কিছু খাইয়ে দিয়েছে? সেই ফুটপাথের চা-টা? সেটাতে কিছু ছিল?

নিশ্চই তাই। আর কিছু হতে পারে না।

পুর্নিমা! উফ্‌ফ্‌! সুমন আর ভাবতে পারছে না। কি করবে ও? কোনো ওষুধ খাইয়ে দিয়ে থাকলে তার প্রভাব কাটবে নিশ্চই এক সময়।

কতক্ষণ? আর কতক্ষণ? এখনো তো নড়তে পারছে না। ওর কি হাত-পা বাঁধা আছে? বুঝতে পারছে না।

“মাআআআআআআআআআআআআআআআআআ” নিস্ফল চিৎকার করল সুমন।

ভগবান! কাল তো কিছু বুঝিনি ওদের দেখে। কান্না আসছে সুমনের। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

এ কী হল ওর? এক বছরও হয়নি ওদের বিয়ের। পূর্নিমাকে নিজেই পছন্দ করেছিল সুমন। রীতিমত ১২টা বাড়ি ঘুরে মেয়ে দেখে বাছাই করেছিল। বেশ সরল, সাধাসিধে দেখতে – ওর মনে হয়েছিল এ মেয়ে ভাল সংসারী হবে। বরকে রান্না করে খাইয়ে আনন্দ পাবে, এক গাদা উটকো দাবি থাকবে না, মা’র সাথে কোনো ঝগড়া...

“আআআআআআআহহহহহহহহ!” সুমনের সব চিন্তা ভাবনাকে ওলট পালট করে দিয়ে হঠাৎ একটা শব্দ – একটা বীভৎশ শব্দ। যেন এক হাজার শাঁখ, কাঁশর, ঘন্টা এক সাথে বেজে উঠেছে সুমনের মাথার ভেতর। মাথার প্রতিটা শীরা-উপশীরা উপড়ে বেরিয়ে আসছে বাইরে। অদ্ভুতভাবে সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠছে।

সুমনের শেষ অস্ফুট আর্তনাদ কেউ শুনতে পেল না। ও শুধু অবাক বিস্ময়ে দেখল, সেই ছেলেটা – সেই কালকের ছেলেটা – হাসি হাসি মুখে ওর দিকে এগিয়ে এল, তার বিশাল নোংরা হাতটা দিয়ে সুমনের মুখটা চেপে ধরল, এক হাতে তুলে নিল ওর মাথাটা, আর সেই অসহ্য আওয়াজটাকে থামিয়ে ওর মাথাটাকে নিজের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল “হ্যালো!”।




Wednesday 30 May 2012

Reverie


This article appeared in the ISIAA magazine Taarpor. It aims to describe my
"Life After ISI". Do check out the link. You will not be disappointed.


Over the last hour or so, I had scratched my head, twirled my neck, picked my nose, dropped the pen twice - and picked it up, yawned, and yawned. And mostly, I yawned. As I stared at the screen in front, the endless lines of code danced around, playing hide and seek with each other, as if to taunt my sensibilities. I shook my head, my eyes in a squint, trying hard to make sense of this puzzle. Aren’t there too many variables in there? Do I really need so many of them? What about dropping a few of them? Or, maybe I do need them. Last time I checked, I was positive, each and every variable in the code made sense. I wrack my brain, trying to find a distant memory, while the variables continue to dance around. Some of this looked vaguely familiar. Somewhere, some faraway place, this – all of this – used to make sense. I know it. But where was it? When was it? I shake my head again.

Faces come floating by. A shortish man comes forth - salt and pepper hairs, his slippers weary from years of overuse, and a shirt that has given up on staying in sync with its times. “Integration is fun! See?” he says. No, I don’t see. I never quite saw the fun in it. But have always been in awe about it. Awed, and bewildered. Also discombobulated! Now, that’s a word I learnt somewhere - some book of words I memorized for some exam, ages back. Funny how I remembered a word I never meant to use anywhere. Anyway, where was I? Ah yes, the X’s and Y’s. Was it this man’s class where I found them? No, it couldn’t have been him, because he’s scribbling about some imaginary i’s too. I have no truck with those i’s, you see?

Ah, there’s a lady with a charming smile! She is saying something about orthogonality. Is it she who gave me all these numerous variables? I ask her “Ma’am, what do I do with these X’s now?” “Well, why not design it in a way so that you confound them? Then they will no more be estimable, and you no longer will have to worry about them, you see?” she says. No, no, no. I don’t see. Confound, did you say? You mean, discombobulate? That word again? I never wanted to use that word! Don’t you see?

I need to search elsewhere. I look around, and I see faces, and more faces. Some were smiling at me. Some pointing fingers and saying “That fish curry smelled bad!! Did you do the mess duty at the BH today?” I think I did! I cower and hide. I can hear the once familiar sounds of a striker hitting the coins on a carrom board. Then there’s a familiar voice advising me “Somnath, take aim, and then hit hard, hit very very very hard. OR, hit softly.” I can hear boys around us laughing at the obvious contradictions within the directions. Or maybe, they are laughing at me, because I was making that face again, one that can be only described by that word. No, I won’t use it here. Don’t mean to, you see?

“GIVE ME A BETA!” I jump around to see a bearded face. He’s plainly disgusted at my lack of grasp of variable handling tactics. “The BETA” he said again. I pick up the pen I had dropped by then. “Where do I find it, Sir?” I say, somehow managing to find my voice. His menacing demeanor mellows a bit. “Why? Just reduce the dimensions! Why don’t you take one of those multivariate medians? There’s Tukey’s, and Oja’s, and then there’s this comb…”  I start to run, before he finishes.

And so I run, and run. More faces come and go. I whizz by an airport tarmac. Then I grow wings and I fly across the oceans. I find a new voice that can weave through arguments and deliberations, a new skin to slip into while in conferences and seminars. I grow arms that can embrace a lady love. I find new eyes that can see through the lens of a baby. I begin to tell the kids that I have seen it all.

But all the while I knew that the variables slowly began to lose meaning. Every time anyone asked, I fumbled a bit more. Every question asked – at the office, at the marketplace, at the interview board – everywhere – seemed a little more challenging.

Then I begin to realize. These codes on the screen, they asked new questions, they play with new variables – a new world altogether. Those faces in ISI – they were not meant to explain it all. I begin to remember now. ISI it was, that I thought had added meaning to all the variables of my life. But then, the code was easy and simple, and I left those meanings when I stepped out of it. Today, as the variables dance around uncontrollably, I begin to find myself, well, discombobulated. See?

Sunday 6 May 2012

শহীদ




কেউ দেশপ্রেমে শহীদ হয়, কেউ জন্নতের ১৮-টা হূরের লোভে, আবার কেউ প্রেমে। এদের মধ্যে কোনো একটা হওয়াটা ক্ষুদিরামের কপালে নাচছিল। নয়তো কখনো বাপ মা ও’রকম নাম রাখে? হতেই পারতো শাহরুখ, কুনাল, কিংবা রনবীর। তা না, হবি তো হ ক্ষুদিরাম, আর ওই নামটাই হল কাল।

বুঝলেন না? তাহলে বুঝিয়ে বলি।

আশা করি আন্দাজ করতে পারছেন আমি সেই আদি অকৃত্রিম বোসবাবুর কথা বলছি না। তাঁর লাইফ স্টোরির সাথে তো নামের বিশেষ যোগাযোগ নেই। আমাদের ক্ষুদিরাম একদম আলাদা। নিবাস দক্ষিন কলকাতার রিফিউজি কলোনী, কাজ প্রধানত সিনেমার টিকিট ব্ল্যাক করা আর মাছি মারা। এর বেশী পরিচয় নিষ্প্রয়োজন। সত্যি বলতে কি, বলার বিশেষ কিছু নেইও। বাকি যারা আশেপাশে আছে, তারা এতদিনে আশা ছেড়েই দিয়েছে যে ক্ষুদিরাম জীবনে আর কিছু করে উঠতে পারবে।

তো এহেন ব্যক্তির জীবনে রোমাঞ্চকর কোনো ঘটনা তো বড় একটা ঘটেনা। তাই কোনো রোমাঞ্চ ছাড়াই ক্ষুদিবাবুর জীবন চলছিল। এদিকে উঠতি বয়েস, কিছু ছোঁক ছোঁক ত থাকবেই। তার তাড়নেই হোক, বা দৈনিক অভ্যেসেই হোক, আমাদের ক্ষুদিরাম রোজ রাতের শো চলার সময় পাড়ার হলটার ঠিক পিছনের একটা ঠেকে গিয়ে বসতো। ওখানে তখন নানা রকম লোকের আনাগোনা – কারোর মদ চাই, কারোর গাঁজা, কারোর মেয়ে। মানে সব মিলিয়ে বেশ একটা গরমাগরম পরিবেশ। ক্ষুদির অবশ্য প্রথম দুটোয় বিশেষ রুচি নেই। সে শুধু মেয়ে দেখতে যেত – ছুঁড়ি, বুড়ি, মাঝবয়েসী – নানা রকম।

আপনারা নির্ঘাৎ এতক্ষনে দু গাল চাপড়ে ‘তোবা তোবা’ বলে উঠেছেন, আর ভাবছেন এই চুড়ান্ত অস্লীল গপ্পটা ফেঁদে আমি আপনাদের নির্মল সকালটায় এক ছটাক চোনা ফেলার তাল করছি। কিন্তু ব্যাপারটা একেবারেই তা না। আমাদের ক্ষুদি একদমই সে’রকম ছেলে না। যদি সে’রকম হত, তাহলে কি এতদিনে একটাও মেয়েকে পটাতে পারত না?

চেষ্টার অবশ্য অভাব ছিল না। কিন্তু ওই। একে ত অ্যামিবায়োসিসের রুগির মত রূপ-লাবন্য। সেটা অগ্রাহ্য করে যদিওবা কোনো ছুঁড়ি একটু মুচকি হেসে তাকায়, ক্ষুদিরামের দেঁতো হেসে “আমি ক্ষুদি গো, যাবে আমার সাথে?” শুনেই তারা চম্পট দেয়।

শেষে ক্ষুদি পাড়ার রোমিও পিকলুদার দারস্থ হলপিকলুদা ক্ষুদির দুঃখের কাহিনী শুনে মন্ত্রনা দিল “তোর নামটা বদলে ফ্যাল, বুঝলি? দেখিস না, সিনেমার হিরোগুলো সব পটাপট নাম বদলে কুমার হয়ে যায়? ওই ক্ষুদি-ফুদি চলবে না। আজ থেকে নাম নে উত্তম কুমার”।

“কি যে বল পিকলুদা!” ক্ষুদি লজ্জা পেয়ে কেটে পড়ে। যদিও সে পরে ভেবে দেখেছে, আইডিয়াটা মন্দ না। ক্ষুদি নামটা সত্যি কেমন জানি ইয়ে টাইপের। পরের মোলাকাৎ-এর জন্য সে অন্য নাম ভেবে রাখল। এক সপ্তাহ রাত জেগে অভ্যেস করল কিভাবে নিজের নামটা বলবে।

তারপর কিছুদিন কেটেছে। বাজারে একটা হিট সিনেমা এসেছে, তাই ক্ষুদির পকেটেও কিছু মালকড়িও জমেছে। এমন সময় তার ভাগ্যে শিকে ছিঁড়লো।

মেয়েটাকে বেশ ডাগর-ডোগর দেখতে। অল্প মোটার দিকে, কিন্তু ক্ষুদির ও’রকমই বেশী পছন্দ। প্রথম খানিক্ষণ তো চোখই ফেরাতে পারেনি। এ পাড়ায় নতুন নিশ্চই, আগে ত একে দেখেনি! জামা কাপড় পরার ধরনটাও একটু অন্য রকমের, সেকেলে। নির্ঘাৎ গ্রাম থেকে সদ্য এসেছে, আর ওই বাজে মেয়েগুলোর চক্করে একদম নষ্ট হয়ে যায়নি।

পরপর তিন প্যাকেট পান মশলা শেষ করে, অনেক সাহস জমিয়ে সে গেল মেয়েটার কাছে।

“তোমার নাম কি গো?”

মেয়েটা শুধু ঠোঁট টিপে হাসল।

কি মিষ্টি হাসিটা! “ঊফ্‌ফ্‌! তুমি না... কি বলব? একবার দেখেই তোমায় মন দিয়েছি”।

মেয়েটা এবার খিলখিল করে উঠল। তারপর সুরেলা গলায় বলল “মঁনঁ দেঁব নাঁ, দেঁব নাঁ, দেঁব নাঁ রেঁ”।

ইশ্‌শ্‌! গাইতেও পারে! ক্ষুদি ত গলেই গেল একেবারে “কেন গো? কি চাই তোমার? আমি তোমায় সব দেব। সব। আমি যে তোমার রাম!”

ওমনি মেয়েটার মুখের হাসি শুকিয়ে গেল। “কিঁ নাঁম বঁললিঁ রেঁ মিঁনসেঁ? আঁমি ওঁই নাঁম মুঁখেঁ আঁনবোঁ?”

এইনা বলে, মেয়েটা না, জাস্ট বেমালুম উবে গেল।

Friday 4 May 2012

শকুন্তলা ও দুষ্মন্ত






“আর কতক্ষণ চামচটা নাড়বে? এবার গেলো!”।
তিরস্কার শুনে দুষ্মন্ত তড়িঘড়ি খাওয়ায় মন দিলেন। মন দিলেন বটে, কিন্তু কতক্ষণ? দু’চামচ খাওয়ার পর যে কে সেই।
“কি গো! গেলোওওওওও”।
“আরে ধুর্‌! এই জিনিস দিনের পর দিন গেলা যায় নাকি?” বলে উঠে পড়ার উপক্রম করলেন দুষ্মন্ত।
“খবরদার যদি উঠেছো!”
শকুন্তলার চোখ পাকানো দেখে দুষ্মন্ত আবার ধপ করে বসে পড়লেন। দুধে মেখে যাওয়া কর্নফ্লেক্সের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তাঁর মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠল।
“শোনো না, একদিন না হয় নাআআই খেলাম? তাতে কেউ অসুস্থ হয়ে যায় না!”
“আচ্ছা, এই বাচ্চা ছেলেদের মত রোজ ঘ্যান ঘ্যান করে কি আনন্দ পাও বলো তো? ছেলে বউমার তো কাজ আছে, চাকরি আছে, তারা কি রোজ রোজ তোমায় পোলাও কালিয়া রেঁধে খাওয়াবে নাকি? আমি ঠিক থাকলে না হয় আমিই কিছু একটা রান্না করে খাওয়াতাম। লক্ষ্মী ছেলে, খেয়ে ফেলো”।
আগের চোখ পাকানোতেও লাভ হয়নি, এতো অনুরোধ উপরোধেও বিশেষ লাভ হোলো না। দুষ্মন্ত চামচ হাতে বসে রইলেন।
“সেই শেষ কবে তোমার হাতের পোলাও খেয়েছি, এখনো মুখে স্বাদ লেগে আছে। তোমার বউমাকে এট্টু শিখিয়ে দাও না, মাঝে মাঝে করে দেবে”।
“তার কি অতো সময় আছে না কি? সেই যুগ আর নেই গো, যে বাড়ির বউরা তোমার মত অকর্মণ্যদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। ওদেরও কেরিয়ার আছে। আর আমাদের তিন্নিও তো চাকরি করছে, সেও তো সপ্তাহে একদিন দুদিন করে রান্না করে। দিনের পর দিন বাসি তরকারি, ম্যাগো! কিন্তু জামাইও তো দেখি সোনামুখ করে খেয়ে নেয়। তোমারই যত প্যানপ্যানানি বাপু”।
“আহা, ওর কথা আলাদা’।
“কেন? ওর কথা আলাদা কেন? নিজের মেয়ে, অমনি, না?” শকুন্তলা আরেকবার ভুরু তুলে চোখ ঘোরালেন।
“তোমার সাথে কথা বলতে যাওয়াই অন্যায় হয়েছে”। দুষ্মন্ত তর্কে দাঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন।
“যাচ্ছো কোথায়? শেষ করে উঠবে”।
“বাবা, আমি বেরোচ্ছি। দুপুরের খাবারটা চাপা দেয়া রইলো, মাসি এসে গরম করে দিয়ে যাবে, খেয়ে নিও, কেমন? চললাম।” সিঁড়ির তলা থেকে বউমার গলা শোনা গেলো।
দুষ্মন্ত উত্তর দিলেন না। ওটা নিত্যকার রুটিন, ওর উত্তরের অপেক্ষাও কেউ করবে না, সেটাও তিনি জানেন।
ছেলে এখনো বেরোয়নি। তার আবার এক ঘন্টা ধরে চান করার বিলাসিতা আছে। রোজ বউমা বেরিয়ে যাওয়ার পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে সে বেরোয় অফিসের জন্য। আজও সে এখনো বাথরুমে, আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
দুষ্মন্ত আবার শকুন্তলার দিকে ফিরলেন। “দেখেছ? সেই কালকের বাসি ঢ্যাঁড়স আর ঢ্যারঢ্যারে ডাল খেতে হবে দুপুরে। ঘেন্না ধরে গেল! বাড়ি তো নয়, একটা দশতলা উঁচু জেলখানা!”।
“জানি গো, কি করবে বলো?” এতক্ষণে শকুন্তলার গলায় একটু নরম সুর। সত্যিই তো, লোকটা ঢ্যাঁড়স একদম ভালবাসে না। ছেলেটাও হয়েছে তেমনি। অন্তত বাবার কথা মাথায় রেখে বাজার করতে পারে তো!
“মাথা ধরেছে?”
দুষ্মন্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন। “হ্যাঁ, সেই আধ-কপালেটা আবার...”।
“ওই ঘরে মলমটা আছে, যাও লাগিয়ে নাও”।
“ধুস্‌, দরকার নেই। এট্টু মাথাটা কেউ টিপে দিলে আরাম হোতো”। 
শকুন্তলা করুন চোখে চাইলেন। “খুব কষ্ট হচ্ছে, না? ছেলেকে ডাকো না একবার”।
“না, থাক” দুষ্মন্ত আরেক চামচ গলা গলা কর্নফ্লেক্স খেলেন।
শকুন্তলা কি জানি ভাবলেন একটু। তারপর বললেন “আচ্ছা এসো, আমিই মাথাটা টিপে দিচ্ছি”।
“দেবে?” ভেজা চোখে একবার শকুন্তলার দিকে তাকালেন দুষ্মন্ত। “আসছি, দাঁড়াও” বলে কোনোরকমে ছড়ির ওপর ভর দিয়ে উঠে বেডরুমের দিকে পা বাড়ালেন।
“ওদিকে কথায় যাচ্ছো? আবার দরজা গুলিয়েছো!”
“ওহো, সরি”। দুষ্মন্ত ধীরে ধীরে বারান্দার দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
রজনীগন্ধা আর ফটোফ্রেমের পিছনে শকুন্তলার দুষ্টু হাসিটা দশতলা নীচের কোলাহলে হারিয়ে গেলো।

Wednesday 2 May 2012

Mortal Love


He reached out to touch her. She felt unusually cold.

He had been marveling at her beautiful figure for the umpteenth time. Her chiseled body was exquisitely crafted. She was slender, and had a dark skin that had a shine to it that could make the morning’s first light glide over her graceful curves. Looking at her, it was hard to believe that men have used her at their whims since her birth. Must be years now since the day she was sold to the streets, but it has failed to soil her innards. If anything, it steeled her into being perfect. God had made her pretty, but it’s the men who had bent her into her current form – stunning and deadly. How many souls must have fallen prey to her? He wondered. How many gallons of blood would have lost their way at her mere breath?

“Lovely” he whispered as he kissed her long neck. She was worth owning - every single moment of it.

He found her at a street corner one day, in the middle of a street fight. She had taken sides with the local gangs, and they ended up being the loser that morning. While the men fought over more mundane matters of gold and cash, she was left unattended on the curb. When he found her, she was cold, maybe even colder than she is now. She was soiled and unwanted, and hardly looked herself. Thankfully, she was unhurt. On another day, he would have walked by without even noticing her. But notice he did, and then he couldn’t resist himself. He had wrapped his parka around her, and walked off briskly. Her wet touch had excited him, causing a sudden rush of warmth in his veins. He probably had blushed too. Looking back, if feels a little strange. She did not take any notice of his fast racing heart, neither did she resist. Instead, she appeared to blend into her skin as he clung to her with his shaking hands. Maybe, she wanted to be with him, and get away from all the scum around her. Maybe, she wanted a cleaner pair of arms to hold her, caress her.

He thanked the lord again for that day. What a gift! What a stroke of luck!

He has taken good care of her since. And they have been inseparable too. Be it at the dining table, or the bathtub, they have been a couple to behold. The way she has blended into his life over the past few days is nothing short of a fairytale.

Only the other night, he began to open up to her. As the stories came pouring out, the memories slowly dissolved into the present. First, he took her to see his high school and the adjoining soccer ground where he scored his first hattrick. Then to his first rented apartment, his first employer’s chambers, his favorite sunset point.

And finally he took her to see his ex-girlfriend. He had expected it to be an awkward meeting, with long silences and longer sighs, but he was in for some surprises. They immediately took a liking to each other. And how they connected! He never would have imagined anyone could calm down his hyperventilating ex like she did. 
“What a blessing!” he kept saying to himself, as he slowly lowered his lips on to her. Warm blood is beginning to rush back into his crazy thoughts. “Time to make love again, my love, time to bring you back to life again. Yes, take all my warmth, and come back to the light once again. One last time”. And as her innards emptied into his senses, he finally slid back into the slumber that eluded him for ages. His warm blood touched the dried one on his ex. She lay there between them, forming the last eternal bridge. A bridge both warm and cold.