Sunday, 21 July 2013

Medicene

This post is a part of Write Over the Weekend, an initiative for Indian Bloggers by BlogAdda
--------------------------------------------------------------------------------------------




After a swift gulp of the fiery liquid, Samuel looked out of the window.
“Inebriation is a way of life for some. More so, when the love and adulation of millions serve that heady cocktail. What else would you expect?”
Samuel, or Sam, as I call him, was again slipping under his favourite philosophical skin, ready to take on the banalities and fruitlessness of life around.
With half a smile dangling on his lips, he carried on.
“Damn those lucky bastards! And damn those idiots around him. Sticking their tongue out, for a drop of the saviour’s piss. Gurujiiiii….” The last word, with its perfect tonal inflections, pictured all the hate, sarcasm and disgust he could have mustered.
“Hey hey hey!” I had to take control here. This is, after all, too familiar for me. By the time the fourth shot of whatever-is-there-in-that-bottle will go down Samuel’s throat, the ship of his senses would have set sail for the horizon. But till then, he would need a sober hand or two to keep his tongue-lashing in control.
“Hey Sam! Why don’t you take a nap? The upper berth is free. Come on. Here. Let me hold that glass.”
“O no no no no no!” Samuel was nodding away with utter conviction. “You think I’m smashed? Hah! I’m not. They are.”
He was waving away at the thousands who have gathered at the train station to take a glimpse of his holiness Sadanand Maharaj. The man who has been the biggest spectacle in the political landscape of these parts. From a rather unknown corner of the gangetic plains, he has risen the political ladder in slow but assured steps – from a village godman, to a fringe right wing party leader, to the champion of the religious cause of so many. My friend Samuel, needless to say, has very little respect for the religiously inclined. A staunch non-believer, he swore by anything that trashes faith and embraces alcohol. It’s the latter which usually causes most of his headaches, but the former is beginning to become mine today.  After all, we are travelling by the same train as Sadanand-ji, and there is no dearth of his fanatic followers among our fellow travellers.
Sam let out a raspy laugh as the train jerked into motion. The throngs of followers outside were beginning to run alongside the train. Guru-ji must be standing at the door of one of the AC compartments behind us, showering blessings on all and sundry.
“Sons of bitches. Hah!”
“Sam, hey! Planning to get lynched, or what?” I got my voice down to whisper now. “See that man? I will bet a tenner that he won’t hesitate to slit your throat if he heard what you said.”
I pointed at a man sitting at the corner of the opposite berth. The reddish tinge in his eyes gave away more than the smell of country liquor coming from his mouth. He was probably as harmless as an earthworm dipped in vinegar, but I was hoping Sam wouldn’t notice that.
“Him? Another of sadhu-ji’s toe-lickers? Ha ha ha!”
Sam did notice, and his more than loud laugh was noticed all around as well. I shrunk a little into my corner seat.
“Sam. Sam. Shhhhh. Saaaammm!” The desperation in my voice was clearly audible, even if my whisper was not.
It took a minute before the rumblings of his laughter died down. By now, I was giving up hope of salvaging the situation.
I decided to shut up. What will be, will be.
A few minutes and a few hiccups later, Sam seemed to be falling asleep - his head hanging down, and his eyes barely open. Finally! I got up to make room so he could lie down.
“Let him be, son.”
I haven’t even noticed when the elderly lady on the opposite top berth has woken up. She was observing us with an amused face.
“Let him be”, she repeated.
Sam, by now, was getting into a stupor. Maybe, the lady is right. I will simply wait till he dozes off.
“He really hates Sadanand-ji, doesn’t he?” She asked the most redundant question for the occasion.
 I simply smiled back. I don’t want to say it, after all.
“I bet he has a distaste for all these religious stuff going on here.”
Damn right. I nodded.
“Do you like him?” She is striking up a conversation now.
“Who?”
“Sadanand-ji, of course!”
I wondered what would be the right response that would kill the discussion.
“It’s okay to say you don’t, you know”. She has read the slight hesitation in me.
I repeated my sheepish smile, and looked at Sam. He eyes are closed now.
“Erm. Actually….” I did not finish my sentence.
“I saw you board at Allahabad. Do you live there?”
“No.” She was asking too many questions. Questions I did not want to answer.
“On business, then?” I nodded. Some business it was, for sure.
“Hell of a time to be in the city, isn’t it? With Sadanand-ji performing the grand yagna and all.”
I planted the same old smile. Hellish it was, no doubt.
“So.” She paused before asking what I’m sure she meant to ask all this time. “Why don’t you stop your friend from drinking?”
Sigh. “I try”
“So was that some medicine? Or drugs?”
“What?”
“I saw you. When you friend went to the door for a smoke, you added something to his drink. What was it?”
She saw!
“Well yes, sort of medicine only”. This was embarrassing. I fidgeted with the pack of cigarettes in my hand. And I blushed.
“Ayurvedic?”
I looked at Sam’s face once more - to be sure he is asleep.
“I can tell you, but he must not know.”
She waited while I took a deep breath.

“Sam... He is dying…It was his last hope… his… it was… Sadanand-ji’s vibhuti... the ashes from his yagna.”

Monday, 15 July 2013

Sparkle

This post is written for the 110 Creative Challenge Contest, hosted by Thewhitescape
---------------------------------------------------------------------------------------------

Shopkeeper: “Yes sir, how may I help you?”
Gentleman: “How much is that solitaire?”

Boy: “Just one rupee sir… I haven’t eaten anything for two days…”
Gentleman: “Get lost! Shoo!”

Shopkeeper: “Would you like this one, with the rubies?”
Gentleman: “No, she doesn’t like red. It will be only diamonds.”

Boy: “Please sir!”
Gentleman: “Stop touching my car. And keep that fake crying for someone else.”

Shopkeeper: “Excellent choice sir! That will sparkle forever. Shall I keep it aside?”
Gentleman: “Yes, I think I have made up my mind. Gift wrap it.”


The sparkle of the diamond was smothered in a dark vault. 
The glitter of the teardrops remained. Forever.

Sunday, 19 August 2012

সিঁড়ি


গুনে গুনে ২০টা ধাপ ভাঙলে তবে ছাদ। চারপাশের ইঁটের জঙ্গলের মাঝে ছোট্ট একটা দোতলার ছাদসে ছাদের কোনো বাহার নেই, কাপড় শোকানোর জন্য ছাড়া বড় একটা কেউ সেখানে যায়ও না। যান শুধু কাবেরী। ঠিক ছাদে নয়, ছাদের কোনায় যে একটা ঠাকুরঘরটা - সেইখানে

ঠাকুরঘরের ভেতরেও বিশেষ কিছু নেই – খালি একটা মাঝারি আয়তনের সিংহাসন আর তার ওপর শালগ্রামশিলা, মা কালীর ফটো, গণেশের মূর্তি, শিবলিঙ্গ। কিন্তু সে সব ছাপিয়ে যেটা সবচেয়ে বেশী চোখে পড়ে সেটা হল উত্তরের দেওয়ালে পাশাপাশি তিনটে ক্যালেনডার। একটায় সারদা মা, একটায় রাধা-কৃষ্ণ, আর একটা মা তারার ছবি। নীচের তারিখগুলোর বিশেষ কদর নেই অবশ্যতারিখ আর ক্ষণের শুভাশুভের হিসেব রাখতে পাঁজি তো রয়েছেই। ক্যালেন্ডারগুলোর আসল ব্যবহার হল নিয়ম করে ছবির মা তারার পায়ে আর সারদা মায়ের কপালে লাল চন্দনের ফোঁটা দেওয়া। রাধা-কৃষ্ণর জন্য যদিও শ্বেতচন্দনের ব্যবস্থা। এই নিয়মের অন্যথা হয়নি গত ৭ বছরে। আজও হওয়ার কোনো কারণ নেই।

তবে বাধ সাধছে ওই ২০ ধাপ সিঁড়ি। ঠিক আজ নয়, গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই বাধ সাধছে।

প্রথম কয়েক ধাপে কিন্তু এখনো বিশেষ কষ্ট হয় না।

রেলিঙে ভর দিয়ে তরতর করে ৫টা ধাপ উঠে পড়লেন কাবেরীদেবী। একটু দম নিলেন।

সিঁড়ির মাঝামাঝি থেকে এক পাশ ধরে চটি সাজানো – কোনোটা ঘরের, কোনোটা বাইরের। নজর পড়তেই মেজাজটা খিঁচড়ে গেল। বড্ড, বড্ড বিরক্ত লাগে ওনার এটা দেখলেইকতদিন বলেছেন, একটা জুতোর র‍্যাক কিনলেই চুকে যায়। বুবাই নির্ঘাত একদিন পা জড়িয়ে পড়ে অনর্থ ঘটাবে।

বুবাই - মানে সবেধননীলমণি নাতি। যার চিন্তা করতে করতে আজকাল মন্ত্রের খেই হারিয়ে ফেলেন কাবেরী – সেই বুবাই।

আজ ফিরুক ছেলে, ঘ্যান ঘ্যান করে করে ব্যাতিব্যস্ত করে তুলবেন, যতক্ষণ না রাজি হয়। সে ফিরতে যত রাতই হোক। মনে মনে রাত ৯টার ঘরে একটা ঢ্যাঁড়া দিলেন কাবেরী।

ছেলে বউ নাতি নিয়ে কাবেরীর ছোট্ট সংসার। ছোট বলে কিন্তু ঝক্কি কম না। যাবতীয় দায় দায়িত্ব বউমার হাতে ছেড়ে দিয়েছেন, তবু তার সংসার থেকে ছুটি পাওয়া হয়নি এখনো। নাতির পেট কামড়ালে দেশোয়ালি টোটকা দেওয়া থেকে শুরু করে পুজোয় ছেলের শ্বশুরবাড়ির জন্য শাড়ি পছন্দ করা অবধি, সবটাতেই এখনো তার নজরের প্রয়োজন পড়ে। অনেকদিন থেকেই ভাবছেন, এবার ছুটি নেবেন। সত্যিই তো, আর কতদিনই বা টানবেন? আজ ৪০ বছর হতে চলল, এই জোয়াল কাঁধে নিয়েছেন, এবার তো...

ভাবতে ভাবতে মনে পড়ল, পুজোর আর মাত্র এক মাস বাকি, কিন্তু শাড়ি এখনো কেনা হয়নি। উফ্‌ফ্‌, সব কী এখনো ওনাকেই মাথায় রাখতে হবে? সিঁড়ির মত বিরক্তিও আজ ধাপে ধাপে উঠছে।

রাত ৯টার ঘরে আর একটা ঢ্যাঁড়া পড়ল।

লম্বা একটা নিশ্বাস টেনে পরের ধাপটা উঠলেন কাবেরী। আর অমনি মাথায় কি একটা ঠেকলো।

ন্যাতা! সিঁড়ির এপার-ওপার টানা দেওয়া কাপড় শুকোনোর দড়ি, তার ঠিক মাঝখানটায় ঝুলছে একটা নোংরা ন্যাতা। কোনো মানে হয়? এই চান করে বেরোলেন, পুজো দেবেন। ছিঃ! আর সহ্য করা যাচ্ছে না!

“বউমাআআআআ”!!

বউমার সাড়া তিনি আশা করেননি এই সময়। তার তো রোজ রাত জেগে খুটখাট ল্যাপটপে কাজ, আর রোজ দেরী করে ওঠা। এখনো তার ঘুমের সময়।

ডাকে যদি সাড়া নাও দেয়, অন্তত ঘুমটা ত নষ্ট হবে একটু। বুড়ো মানুষটাকে ভোগানোর এইটুকু শাস্তি অন্তত হোক!

“বউমাআআআআ”! গলাটা একটু চড়িয়ে চেঁচালেন কাবেরী।

সাড়া নেই। না থাক। তিনি নিশ্চিত ঘুম এবার ঠিকই ভেঙেছে। বিরক্তির পারদ একটু নামিয়ে পরের সিড়ির ধাপে মন দিলেন কাবেরী। ঠাকুরঘরে গঙ্গাজল তো আছেই, শুদ্ধি করে নেওয়া যাবেখন।

২০ ধাপ সিড়ি – ১০টা এমুখো, ১০টা ওমুখো। মাঝখানে একটা ছোট্ট ল্যান্ডিং। ছেলে একটা টুল রেখে দিয়েছে ওখানে। কাবেরী ওইখানে বসে একটু জিরিয়ে নেবেন।

কিন্তু তার আগে আরও ৪টে ধাপ।

অনেকদিন ধরেই ছেলে বলে আসছে - ঠাকুরকে একতলায় নামিয়ে আনলেই হয়, রোজ রোজ এইভাবে সিড়ি ভাঙার তো কোনো প্রয়োজন নেই! ও কি বুঝবে? আজকালকার মেয়ে – তাদের হাতে সংসার ছাড়া যায়। কিন্তু পুজো, ছোঁওয়াছুঁই? ও কি ওদের বোঝানো যায় নাকি? বেশী বলতে গেলেও আবার কথা শোনাবে – কোনটা কুসংস্কার, কোনটা পাগলামি – আরও কত কি!

তার চেয়ে ভাই ন্যাতার ওপর দিয়েই যাক!

নিজের মনে বিড়বিড় করছিলেন কাবেরী। কখন যে টুলটায় পৌঁছে গেছেন, খেয়াল করেননি। ডান হাঁটুটা শক্ত করে চেপে ধরে আস্তে আস্তে বসলেন, কপালের ঘাম মুছলেন আঁচলে।

পুজো আসতে চলল। মা-কে সোনার হার দেবেন বলে মানত করা আছে। কি করে দেবেন কে জানে? এই হাঁটুর ব্যথায় বেরোনই দায়। সেই শেষ কবে দক্ষিণেশ্বর গেছিলেন, উনি বেঁচে ছিলেন তখনও। সেবারই মানত করেছিলান, বউমার ছেলে হলে সোনার হার দেবেন। সেই শীতেই বুবাই হল, আর তার পর পরেই উনি চলে গেলেন। তারপর থেকেই বাড়ির বাইরে বেরোনো বন্ধ হয়ে গেছে।

এই পুজোয় একবার মাকে দেখার ইচ্ছে আছে। তারপর তিনি নিশ্চিন্তে মরবেন।

দেখি। এটাও তো সেই ছেলেকে বলতে হবে।

আর কতো কীই বা উনি বলবেন ছেলেকে? আজকাল ওনার বক্‌বক্‌ শুনতে শুনতে ছেলেও বিরক্ত হয়ে গেছে। উনি যাই বলেন, চুপচাপ শুনে কেমন নির্লিপ্ত মুখে “আচ্ছা” বলে চলে যায়।

“তখন কিছু বলছিলে, মা?” বউমার গলা পেয়ে চিন্তায় ছেদ পড়ল কাবেরীর।

“না বউমা, এই কটা বাজে জিজ্ঞেস করছিলাম।”

“সাড়ে দশটা। তোমার পুজো হয়ে গেছে?”

“হ্যাঁ, এই তো, আর একটু বাকি” বলে মনে মনে জিভ কেটে উঠে পড়লেন কাবেরী। সত্যিই আজ দেরী হয়ে গেছে। এখনও ১০টা ধাপ বাকি যে!

উঠেই বসে পড়লেন। বুকটা ধড়ফড় করছে একটু। আজকাল মাঝেমাঝেই শ্বাসকষ্ট হয়।

আঁচলটা দিয়ে একটু হাওয়া খেলেন খানিক্ষণ। দরদর করে ঘাম আসছে। তবে এটা নতুন কিছু না। একটু চোখ বুজে বসে থাকলেই কমে যাবে।

বসে থাকতে থাকতেই গাছগুলোর কথা মনে পড়ল। ঠাকুরঘরের দরজার কাছে কয়েকটা টব বসিয়েছেন কাবেরী – তুলসি, বেলফুল, গাঁদা। কালই খেয়াল হল বেলগাছটার পাতাগুলো মরে যাচ্ছে – সার দিতে হত।

“ওই যাঃ! খুরপিটা আনা হল না তো!” মাটিটা একটু খুঁচিয়ে আলগা করে দেওয়ার দরকার ছিল।

“আর ক’টা জিনিস মাথায় রাখব? মা, মা গো!”

উঠে দু’ধাপ পেরোলেন কাবেরী। আরো ৮ ধাপ বাকি।

ভেজানো ছাদের দরজার ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ এসে পড়েছে শেষ ধাপটায়। সেদিকে তাকিয়ে কাবেরীর আপশোশ আর বেড়ে গেল। সকাল-টা মেঘলা দেখে ডালবাটাটা রান্নাঘরেই রেখে এলেন। এরম রোদ জানলে বড়ি শুকোতে দিয়ে দিতেন। বউমা বড্ড আরাম করে খায়।

ওকে বলি ডালবাটাটা দিয়ে যেতে?

“বউমাআআআআ”!

আগের দু বারের মতই সাড়া নেই।

যাক গে। কাল দেওয়া যাবেখ’ন।

হয়ে এসেছে। আর একটু উঠলেই শেষ। একটা লম্বা দম নিলেন কাবেরী।

আজ খুব ঘাম হচ্ছে।

********************************

“স্যার, বুড়িটা তো বক্‌বক্‌ করেই দিন কাবার করে দিল। লোক পাঠাই?”

“অত তাড়া কিসের হে চিত্রগুপ্ত? এ তো যে-সে জিনিস না, হল স্বর্গের সিঁড়ি - ভাঙতে সময় লাগে। তুমি বরং লাঞ্চটা সেরেই এসো।” বলে যমরাজ চোখ বুজলেন।

Saturday, 30 June 2012

ছেলেটা


রোজকার মত বাইরে মোরগ ডাকছে, মোড়ের মাথার মসজিদটায় আজান দিচ্ছে। রোজকার মত ঠিক সেই সময়ে সুমনের ঘুমটা ভেঙে গেল।

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ার অভ্যেস। ঘড়ির কাঁটা যেই ৬টার ঘর ছুঁই ছুঁই, সুমন অমনি তড়াক করে বিছানা ছেড়ে উঠে পড়ে। তারপর ৭টার মধ্যে প্রাত্যহিক যোগ ব্যায়াম সেরে চান করে একদম ফিটফাট। তাতে আর কিছু না হক, অফিস যাওয়ার আগে অনেকটা সময় ওর হাতে এসে যায়।

আজ কিন্ত ঘুম ভেঙে হাত-পা কেমন আড়ষ্ট লাগল সুমনের। বিছানা ছেড়ে ওঠা দূর-অস্ত, পাশ ফিরতেও কেমন জানি ইচ্ছে করছে না। সারা শরীরে, মনে এক অদ্ভুত অবসাদ, এক সীমাহীন আলস্য। খানিক্ষন ফুল স্পীডে চলা সীলিং ফ্যানটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে সুমনের চোখটা আবার বুজে এল।

ক’টা বাজে এখন? ওঠবার সময় হয়েছে নিশ্চই! নাকি বেশী সকালে ঘুম ভেঙে গেল? পায়ের দিকের দেওয়ালে একটা বড় ঘড়ি আছে। অনেক কষ্টে একটা চোখ খুলে পিটপিট করে তাকাল সুমন। ধুলোমাখা সবজে রঙের দেওয়ালটা কির’ম জানি বেশী ময়লা লাগছে।

ধুৎ! কোথায়  গেল ঘড়িটা?

খানিক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর সুমন বুঝল কিছু একটা গোলমাল হয়েছে।

ঘড়িটা তো নেই!!! ডাইনের দেওয়াল, বাঁয়ের দেওয়াল – কোত্থাও নেই!

গেল কোথায়? উলটো দিকে মাথা করে শুয়েছে, না কী?

নাঃ! আর তাকিয়েও থাকা যাচ্ছে না। চোখদুটো আপনিই আবার বুজে আসল সুমনের।

---------------------------------

খালি বালতিতে কলের জল পড়ার আওয়াজ সুমনের ভারি অপছন্দ। আর ঠিক সেই আওয়াজেই দ্বিতীয়বার ঘুম ভাঙল আজ।

তার মানে পূর্নিমা চান করতে গেছে।

পূর্নিমা, মানে সুমনের স্ত্রী।

কিন্তু তার তো অনেক বেলায় চান করার অভ্যেশ! কতক্ষন ঘুমচ্ছে সুমন? স্বভাবমত পায়ের দিকের ঘড়ীটার দিকে আরেকবার তাকাল সুমন, আর তাকিয়েই মনে পড়ল “ওঃ! ওটা তো নেই!”

এবার উঠতেই হছে। এক ঝটকায় উঠে পড়ার চেষ্টা করল সুমন।

হল না। একটুও নড়তে পারল না।

“হল কি? পঙ্গু হয়ে গেলাম নাকি?”

“পূর্নিমাআআআআআআআ” – ডাক দিল সুমন। বা বলা ভাল ডাক দেওয়ার চেষ্টা করল। কারন আওয়াজ একটুও বেরল না। কিন্তু ওর তো ঠোঁট নড়ছে, জিভ নড়ছে, এমনকি কথা বলার চেষ্টা করলে কন্ঠনালীতে সেটা স্পষ্ট অনুভব করতে পারছে।

কিন্তু আওয়াজ? আওয়াজের কি হল?

“পূর্নিমাআআআআআআআ” – সেই একই ফল। কোন আওয়াজ নেই।

এবার একটু ভয় করছে সুমনের। ও কি বোবা হয়ে গেছে? কালা হয়ে গেছে? কি হয়েছে ওর?

আর ও এখন আছেই বা কোথায়?

--------------------------------------

বাথরুমে জলের আওয়াজ থেমেছে। পূর্নিমা আর ৫ মিনিটে বেরোবে। তারপর নিশ্চই ওর অবস্থা দেখে ডাক্তার ডাকবে। নিজেকে ভরসা দেওয়ার চেষ্টা করল সুমন।

আর ভাবতে লাগলো। কাল রাতে ও কোথায় শুয়েছে? অন্যদিনের মত কালকেও তো ডিনারের পর একটু হাঁটতে বেরিয়েছিল পূর্নিমাকে নিয়ে। তারপর? রাস্তায় পূর্নিমার স্কুলের কোনো এক বন্ধুর সাথে দেখা হয়ে গেছিল। তারপর যা হয়! খানিকক্ষণ পার্কের বেঞ্চিতে বসে ওদের ছোটবেলার স্মৃতিরোমন্থন, ফুটপাথে দাঁড়িয়ে এক সাথে চা খাওয়া, বন্ধুটার আই-ফোনে ফটো তোলা-টোলা – এইসব হল। তারপর?

নিশ্চই বাড়ি ফিরেছিলাম! আর কোথায়ই বা যাবে সুমন? কিন্তু আর কিছুই মনে পড়ছে না।

রাত থেকেই শরীর খারাপ হয়নি তো? হয়ত তাই-ই কিছু মনে নেই।

পূর্নিমা এখনো বেরচ্ছে না কেন?

“পূর্নি......” নাঃ। লাভ নেই।

গলা শুকিয়ে আসছে সুমনের। এত গরম লাগছে কেন? পাখাটা তো ঠিকই ঘুরছে, তবু যেন হাওয়া গায়ে না লেগে পিছলে যাচ্ছে।

চোখ বুজে নিজের শরীরটাকে নতুন করে অনুভব করার চেষ্টা করল সুমন। হৃদপিন্ডের ধুকপুক ঠিক চলছে তো? হ্যাঁ, চলছে। নিশ্বাসের উত্তাপ পড়ছে ওপরের ঠোঁটে। তাহলে? বাকি শরীরটা কেন ওর মনের বশে নেই? সর্বশক্তি দিয়ে আরেকবার ঘাড় ঘোরানোর চেষ্টা করল সে।

হচ্ছে না।

নিজেকে বড়ো অসহায় লাগছে সুমনের। ও বেঁচে আছে তো? এটা কি বিছানা, না কি এক অদৃশ্য কফিন যার মধ্যে ওকে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে?

-------------------------------------------

“শুনছো? গ্যাস ফুরিয়েছে। ইন্‌ডেনে খবর দিতে হবে” – এতক্ষণে পূর্নিমার গলা শোনা গেল। কখন জানি বাথরুম থেকে বেরিয়ে রান্নাঘরে চলে গেছে।

একবার আমার দিকে খেয়াল করেও দেখল না? অদ্ভুত মেয়ে বটে।

রান্নাঘরে ঘটাং ঘটাং শব্দ। খালি সিলিন্ডার বদলানো হচ্ছে। এই একটা কাজ পূর্নিমা কখন নিজে করেনি, সুমনকে দিয়ে করিয়ে এসেছে। আজ নিজে করছে কেন?পূর্নিমার এঘরে আসা অবধি কিছু করার নেই। মনে মনে সময় গুনতে লাগল সুমন। এক মিনিট, দু মিনিট, তিন...

সিলিন্ডার বদলানো হয়ে গেছে নিশ্চই। গরম তেলে ফোড়ন পড়ার ছ্যাক্‌ ছ্যাক্‌ শোনা জাচ্ছে।

“উফ্‌ফ্‌! ছাড়ো। কি শুরু করেছ বল তো কাল রাত থেকে?” পূর্নিমা??!! এ কার সাথে কথা বলছে?

“এই শয়তান ছেলে! ছাড়ো, রান্না করতে দাও” পূর্নিমার গলায় মিথ্যে রাগ মেশানো আদরের সুর।

সুমন নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। পূর্নিমা!

“এবার ম’লে সুতো হব, তাঁতির বাড়ি জন্ম লব...” এটা তো ছেলের গলা। সেই ছেলেটা – সেই কালকের ছেলেটা। কি জানি নাম?

হাসির আওয়াজ। সাথে আরো অনেক কিছুর, যা সুমন শুনেও শুনতে চায় না।

কি করেছে ওরা? ওকে কিছু খাইয়ে দিয়েছে? সেই ফুটপাথের চা-টা? সেটাতে কিছু ছিল?

নিশ্চই তাই। আর কিছু হতে পারে না।

পুর্নিমা! উফ্‌ফ্‌! সুমন আর ভাবতে পারছে না। কি করবে ও? কোনো ওষুধ খাইয়ে দিয়ে থাকলে তার প্রভাব কাটবে নিশ্চই এক সময়।

কতক্ষণ? আর কতক্ষণ? এখনো তো নড়তে পারছে না। ওর কি হাত-পা বাঁধা আছে? বুঝতে পারছে না।

“মাআআআআআআআআআআআআআআআআআ” নিস্ফল চিৎকার করল সুমন।

ভগবান! কাল তো কিছু বুঝিনি ওদের দেখে। কান্না আসছে সুমনের। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে।

এ কী হল ওর? এক বছরও হয়নি ওদের বিয়ের। পূর্নিমাকে নিজেই পছন্দ করেছিল সুমন। রীতিমত ১২টা বাড়ি ঘুরে মেয়ে দেখে বাছাই করেছিল। বেশ সরল, সাধাসিধে দেখতে – ওর মনে হয়েছিল এ মেয়ে ভাল সংসারী হবে। বরকে রান্না করে খাইয়ে আনন্দ পাবে, এক গাদা উটকো দাবি থাকবে না, মা’র সাথে কোনো ঝগড়া...

“আআআআআআআহহহহহহহহ!” সুমনের সব চিন্তা ভাবনাকে ওলট পালট করে দিয়ে হঠাৎ একটা শব্দ – একটা বীভৎশ শব্দ। যেন এক হাজার শাঁখ, কাঁশর, ঘন্টা এক সাথে বেজে উঠেছে সুমনের মাথার ভেতর। মাথার প্রতিটা শীরা-উপশীরা উপড়ে বেরিয়ে আসছে বাইরে। অদ্ভুতভাবে সারা শরীর থরথর করে কেঁপে উঠছে।

সুমনের শেষ অস্ফুট আর্তনাদ কেউ শুনতে পেল না। ও শুধু অবাক বিস্ময়ে দেখল, সেই ছেলেটা – সেই কালকের ছেলেটা – হাসি হাসি মুখে ওর দিকে এগিয়ে এল, তার বিশাল নোংরা হাতটা দিয়ে সুমনের মুখটা চেপে ধরল, এক হাতে তুলে নিল ওর মাথাটা, আর সেই অসহ্য আওয়াজটাকে থামিয়ে ওর মাথাটাকে নিজের কানের কাছে নিয়ে গিয়ে বলল “হ্যালো!”।