Friday 4 May 2012

শকুন্তলা ও দুষ্মন্ত






“আর কতক্ষণ চামচটা নাড়বে? এবার গেলো!”।
তিরস্কার শুনে দুষ্মন্ত তড়িঘড়ি খাওয়ায় মন দিলেন। মন দিলেন বটে, কিন্তু কতক্ষণ? দু’চামচ খাওয়ার পর যে কে সেই।
“কি গো! গেলোওওওওও”।
“আরে ধুর্‌! এই জিনিস দিনের পর দিন গেলা যায় নাকি?” বলে উঠে পড়ার উপক্রম করলেন দুষ্মন্ত।
“খবরদার যদি উঠেছো!”
শকুন্তলার চোখ পাকানো দেখে দুষ্মন্ত আবার ধপ করে বসে পড়লেন। দুধে মেখে যাওয়া কর্নফ্লেক্সের বাটিটার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে তাঁর মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে উঠল।
“শোনো না, একদিন না হয় নাআআই খেলাম? তাতে কেউ অসুস্থ হয়ে যায় না!”
“আচ্ছা, এই বাচ্চা ছেলেদের মত রোজ ঘ্যান ঘ্যান করে কি আনন্দ পাও বলো তো? ছেলে বউমার তো কাজ আছে, চাকরি আছে, তারা কি রোজ রোজ তোমায় পোলাও কালিয়া রেঁধে খাওয়াবে নাকি? আমি ঠিক থাকলে না হয় আমিই কিছু একটা রান্না করে খাওয়াতাম। লক্ষ্মী ছেলে, খেয়ে ফেলো”।
আগের চোখ পাকানোতেও লাভ হয়নি, এতো অনুরোধ উপরোধেও বিশেষ লাভ হোলো না। দুষ্মন্ত চামচ হাতে বসে রইলেন।
“সেই শেষ কবে তোমার হাতের পোলাও খেয়েছি, এখনো মুখে স্বাদ লেগে আছে। তোমার বউমাকে এট্টু শিখিয়ে দাও না, মাঝে মাঝে করে দেবে”।
“তার কি অতো সময় আছে না কি? সেই যুগ আর নেই গো, যে বাড়ির বউরা তোমার মত অকর্মণ্যদের বসিয়ে বসিয়ে খাওয়াবে। ওদেরও কেরিয়ার আছে। আর আমাদের তিন্নিও তো চাকরি করছে, সেও তো সপ্তাহে একদিন দুদিন করে রান্না করে। দিনের পর দিন বাসি তরকারি, ম্যাগো! কিন্তু জামাইও তো দেখি সোনামুখ করে খেয়ে নেয়। তোমারই যত প্যানপ্যানানি বাপু”।
“আহা, ওর কথা আলাদা’।
“কেন? ওর কথা আলাদা কেন? নিজের মেয়ে, অমনি, না?” শকুন্তলা আরেকবার ভুরু তুলে চোখ ঘোরালেন।
“তোমার সাথে কথা বলতে যাওয়াই অন্যায় হয়েছে”। দুষ্মন্ত তর্কে দাঁড়ি দিয়ে উঠতে যাচ্ছিলেন।
“যাচ্ছো কোথায়? শেষ করে উঠবে”।
“বাবা, আমি বেরোচ্ছি। দুপুরের খাবারটা চাপা দেয়া রইলো, মাসি এসে গরম করে দিয়ে যাবে, খেয়ে নিও, কেমন? চললাম।” সিঁড়ির তলা থেকে বউমার গলা শোনা গেলো।
দুষ্মন্ত উত্তর দিলেন না। ওটা নিত্যকার রুটিন, ওর উত্তরের অপেক্ষাও কেউ করবে না, সেটাও তিনি জানেন।
ছেলে এখনো বেরোয়নি। তার আবার এক ঘন্টা ধরে চান করার বিলাসিতা আছে। রোজ বউমা বেরিয়ে যাওয়ার পঁয়তাল্লিশ মিনিট বাদে সে বেরোয় অফিসের জন্য। আজও সে এখনো বাথরুমে, আওয়াজ শোনা যাচ্ছে।
দুষ্মন্ত আবার শকুন্তলার দিকে ফিরলেন। “দেখেছ? সেই কালকের বাসি ঢ্যাঁড়স আর ঢ্যারঢ্যারে ডাল খেতে হবে দুপুরে। ঘেন্না ধরে গেল! বাড়ি তো নয়, একটা দশতলা উঁচু জেলখানা!”।
“জানি গো, কি করবে বলো?” এতক্ষণে শকুন্তলার গলায় একটু নরম সুর। সত্যিই তো, লোকটা ঢ্যাঁড়স একদম ভালবাসে না। ছেলেটাও হয়েছে তেমনি। অন্তত বাবার কথা মাথায় রেখে বাজার করতে পারে তো!
“মাথা ধরেছে?”
দুষ্মন্ত মাথায় হাত দিয়ে বসে ছিলেন। “হ্যাঁ, সেই আধ-কপালেটা আবার...”।
“ওই ঘরে মলমটা আছে, যাও লাগিয়ে নাও”।
“ধুস্‌, দরকার নেই। এট্টু মাথাটা কেউ টিপে দিলে আরাম হোতো”। 
শকুন্তলা করুন চোখে চাইলেন। “খুব কষ্ট হচ্ছে, না? ছেলেকে ডাকো না একবার”।
“না, থাক” দুষ্মন্ত আরেক চামচ গলা গলা কর্নফ্লেক্স খেলেন।
শকুন্তলা কি জানি ভাবলেন একটু। তারপর বললেন “আচ্ছা এসো, আমিই মাথাটা টিপে দিচ্ছি”।
“দেবে?” ভেজা চোখে একবার শকুন্তলার দিকে তাকালেন দুষ্মন্ত। “আসছি, দাঁড়াও” বলে কোনোরকমে ছড়ির ওপর ভর দিয়ে উঠে বেডরুমের দিকে পা বাড়ালেন।
“ওদিকে কথায় যাচ্ছো? আবার দরজা গুলিয়েছো!”
“ওহো, সরি”। দুষ্মন্ত ধীরে ধীরে বারান্দার দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
রজনীগন্ধা আর ফটোফ্রেমের পিছনে শকুন্তলার দুষ্টু হাসিটা দশতলা নীচের কোলাহলে হারিয়ে গেলো।

7 comments:

  1. এটা বেশ, বেশ ভাল হয়েছে। বেশ ভাল।

    ReplyDelete
  2. Lekha ta khub bhalo hoyeche, with all the hallmarks of a good short story :)

    ReplyDelete
  3. Lekha'r style ta besh pochondosoi. Kintu golpo bodhoy besh generic

    ReplyDelete
  4. oh shanghatik shob golpo. aar tomar lekha ta eto shundor, eto shundor ke kichhu aar bolar nei.

    ReplyDelete